ভারত, যা রহস্য ও বিস্ময়ের পরিপূর্ণ একটি দেশ। রহস্যময় স্থান হোক বা “রহস্যময় ঘটনা”। যা অনেক কিছুই মনুষ্য দ্বারা সৃষ্টি অথবা প্রাকৃতিক ভাবে ভারতে বিদ্যমান। যা আজও পর্যন্ত মানুষকে কখন বিস্ময়ে, আবার কখন রহস্যের জালে জড়িয়ে রেখেছে। রহস্যই বলুন অথবা অলৌকিক ঘটনা, যাই হোক না কেন। যে সকল রহস্য আমাকে যুক্তিযুক্ত ভাবে যথেষ্ট বিচলিত করেছে। নীচে এমনই ৫টি অবিশ্বাস্য রহস্যময় ঘটনার তালিকার বর্ণনা করা হল যা আপনাকেও চমকে দেবে।
ভারতে ৫টি “রহস্যময় ঘটনা”-Mysterious facts,
১ ভানগড় ফোর্ট – Bhangarh Fort!
ভানগড় দুর্গের নির্মাণ ও ধ্বংসাবশেষের সম্পর্কে অনেক গল্প এবং ইতিহাস রয়েছে। এই রহস্যময় ঘটনা গুলির মধ্যে, একটি হলো ভানগড় দুর্গ। রাজা মাধো সিংহ দ্বারা সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত, রাজস্থানের আলেয়ার জেলায় এই দুর্গটি। যেটা ভারতে সর্বাধিক ভূতুড়ে স্থান হিসাবে উল্লিখিত।

দুর্গ চত্বরে, রহস্যময় ভুতুড়ে ঘটনাবলীর কারণে, স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারা দুর্গ থেকে অনেক দূরে বসতি গড়েছে। এমনকি ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ দ্বারা স্থানীয় এবং পর্যটকদের রাতে দুর্গে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। কিংবদন্তি ভানগড়ের এই বিধ্বস্ত, ভুতুড়ে দুর্গটির , বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ অস্বাভাবিক ঘটনার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
ভারতে ৫টি “রহস্যময় ঘটনা”-Mysterious facts,

২ যে গ্রামে ৪০০ জোড়া যমজ রয়েছে ৪০০ pairs twins!
এটি কি সত্যিই , নিজের মতো আরো একজন বিশ্বের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে? কখন কখন এমন কিছু রহস্যময় ঘটনা যা আমাদের কঠোরভাবে বিভ্রান্তিকর চিন্তায় ফেলে। এমনি বিশ্বের সবথেকে রহস্যময় বিষয়গুলির মধ্যে একটি। কেরালার এক গ্রামে ২৮০ জোড়া জমজ বাচ্চা বেড়ে উঠছে, যেটা অবাক করার মতো একটি বিষয়।
কেরালার কোডিংহি (kodinhi) এক প্রত্যন্ত গ্রামের, ২৮০ টি পরিবারে জন্ম নেওয়া ২৮০ জোড়া যমজ। যা বর্তমানে যমজ গ্রাম নামেও পরিচিত। যেখানে বিশেষজ্ঞরা বিস্ময় প্রকাশ করছেন এবং এই অস্বাভাবিক ঘটনাটি যা সমগ্র বিশ্বর গড় যমজের তুলনায় প্রায় ৬গুণ বেশি। ভারতীয় জনসংখ্যার আদমশুমারি অনুসারে, এই রেকর্ডটি ২০০৮ সালের। স্পষ্টতই রহস্যময় ভাবে, প্রতিটি বছরের সাথে যমজদের হার ও বাড়ছে, এবং ২০২০ সালের রেকর্ড অনুসারে যমজদের সংখ্যা ৪০০ বেশি।

২০১৬ সালে, লন্ডন এবং জার্মানি বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের একটি যৌথ দল। এই ঘটনার উত্তর খুঁজতে এই গ্রামে পৌঁছেছিলেন এবং গবেষকরা রহস্য উৎঘাটনের জন্য, যমজদের মুখের লালা এবং চুলের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন।
গ্রামবাসীদের বক্তব্য অনুসারে এই রহস্যময় ঘটনা, প্রায় তিন প্রজন্ম আগেই শুরু হয়েছিল। যদিও অনেকে মতে এটি জিনগত। তবুও মানুষের মধ্যে জল্পনা রয়েছে যে, গ্রামের জল বায়ুর মধ্যে কোন নির্দিষ্ট উপাদানই এই ঘটনার কারণ হতে পারে।
ভারতে ৫টি “রহস্যময় ঘটনা”-Mysterious facts,

৩ ভিট্টাল মন্দির -Vittala Temple!
ভিট্টালা মন্দির (Vittala Temple), যেটি প্রাচীন এক ব্যতিক্রমী স্থাপত্য এবং অতুলনীয় কারুকার্যের জন্য পরিচিত। রহস্যময় এই মন্দিরটি, হাম্পির অন্যতম বিখ্যাত কাঠামো হিসাবে বিবেচিত।মন্দিরটি কর্ণাটক রাজ্যের, হাম্পির উত্তর পূর্বে, তুঙ্গভদ্রা নদীর(Tungabhadra River) তীরে অবস্থিত।
মূর্তিমান মন্দিরের প্রধান দেবতা, ভগবান শ্রী বিষ্ণুকে উৎসর্গকৃত এবং মন্দিরটি ১৫ম শতাব্দীতে নির্মিত। মন্দিরে আকর্ষণীয়, পাথরের স্তম্বগুলি, যা এক আশ্চর্যজনক রহস্যময় ঘটনা। হাম্পির এই প্রধান স্মৃতিস্তম্ভটি পর্যটকদের অবশ্যই দেখার বিষয়।

ভিট্টল টেম্পেলের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দেখার বিষয়টি হ’ল, মন্দিরের স্তম্বগুলি। যা হাতের স্পর্শে সংগীতটির সাতটি শব্দের তরঙ্গ প্রবাহিত হয়। যেটা এক রহস্যময় ঘটনাও বলা চলে।এখানে মোট ৫৬টি স্তম্ব রয়েছে যার মধ্যে সংগীতের সারেগামা ধ্বনী শোনা যায়। মন্দিরের এই স্তম্ভগুলিকে সারেগামা স্তম্ভ’ নামেও ডাকা হয়। মন্দিরটি সকাল ৮.৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পর্যটকটের জন্য উম্মুক্ত।
ভারতে ৫টি “রহস্যময় ঘটনা”-Mysterious facts,

৪ ব্যালেন্সিং রক – Balancing Rocks!
মধ্যে প্রদেশের এমনই একটি স্থান জব্বলপুর, যেখানে কয়েক কুইন্টাল ওজনের বেশ কিছু পাথর সামান্য কয়েক ইঞ্চির বেস নিয়ে স্থির দাঁড়িয়ে রয়েছে। যার গঠন এবং বৈশিষ্ট নিয়ে আলোচনায় বিদ্বমান। ১৯৯৭ সালে জব্বলপুরে ভূমিকম্পের পরেও, পাথরগুলি তার জাগায় আজও স্থির। যা এক রহস্যময় ঘটনা।
এই পাথরগুলি একে অপরের সংঘে কীভাবে আটকে রয়েছে তা আজও রহস্য। পাথরগুলি দেখে মনে হয় শুধু স্পর্শ করলেই গড়িয়ে পড়বে। যদিও পাথরগুলি অবিচ্ছিন্নভাবে দেখায়, তবে রিখটার স্কেলের ৫.৫ পর্যন্ত ভূমিকম্প সহ্য করেছে। এই রহস্যময় ব্যালেন্সিং রক, যা প্রাকৃতিক এক আশ্চর্যের বিষয়।

জব্বলপুরের রহস্যময় ব্যালেন্সিং রক যা বর্তমানে এক অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এই রহস্যময় ব্যালেন্সিং রক কোন ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বারা প্রস্তূত নয়। এটি প্রাকৃতিক এবং বছরের পর বছর ধরে এইরকম ভৱে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে মজার বিষয় হ’ল, দেখে মনে হবে যে কেবল স্পর্শ করলেই গড়িয়ে নীচে নেমে আসবে। বিশাল আকারের রকগুলি যোগসূত্রের বিন্দুর আয়তন, মাত্র ৬ ইঞ্চি, যেটা সত্যিই এক রহস্যময় ঘটনা।
অনেকেই এটি বিশ্বাস করে, যে এই পাথরগুলি স্থানচ্যুত করা অসম্ভব। অনেক বিজ্ঞানী এর রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করেছে। তবে কিছু বিজ্ঞানীদের বক্তব্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বলে পাথরগুলি তার জায়গায় স্থির।
ভারতে ৫টি “রহস্যময় ঘটনা”-Mysterious facts,

৫ পাখিদের আত্মহত্য-Mysterious bird!
রহস্যময় গ্রাম জাতিঙ্গা, যেখানে পাখিরা আত্মহত্যা করতে আসে। পাখিদের আত্মহত্য, এমনি এক ঘটনা যা সমগ্র বিশ্বকে আকর্ষণ করেছে। রহস্যময় ঘটনাটি আসামের জাতিঙ্গা (Jatinga village) নামক একটি গ্রামের। গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, আসামের একটি ছোট্ট গ্রামের উপর হাজার হাজার পাখি তাদের মৃত্যুর উদ্দেশ্যে উড়ে আসছে।
জাতিঙ্গায়, প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক পাখি আত্মহত্যা করতে আসায়। ভারত সহ সমগ্র বিশ্বজুড়ে পাখি বিশেষজ্ঞদের কাছে এটি একটি রহস্যময় ঘটনা।

উত্তর আসামের কাছার পাহাড়ে অবস্থিত, একটি খুব সুন্দর উপত্যকা, জাতিঙ্গা। এই অঞ্চলটি সাধারণত কমলা লেবুর বাগানের জন্য বিখ্যাত এবং স্থানটি একটি পর্যটন কেন্দ্র। এছাড়াও এখানে রহস্যজনক ভাবে পাখিতে আত্মহত্যার ঘটনাটি ও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিশেষত এই আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটে সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টার মধ্যে।
যখন সকালে উঠে, হঠাৎই দেখা যাবে বিপুল সংখ্যক পাখির মৃতদেহ পরে আছে। আপনার কি মনে হবে? এটা কি কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না অলৌকিক ঘটনা। যাইহোক এটি একটি রহস্য, আসামের এই ছোট্ট সুন্দর গ্রাম জাতিঙ্গার । এখানে সেপ্টেম্বর এবং অক্টবর মাসে, হাজার হাজার পাখি একত্রিত হয়ে আত্মহত্যা করে। সর্বাধিক মানুষ এটা মনে করে যে, এখানকার বাতাসে বিষ রয়েছে। যা এই মর্মান্তিক ঘটনার কারণ হতে পারে।